নয়া দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্টের ঘটনায় রেলকে তীব্র ভর্ৎসনা করল হাইকোর্ট। এই ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করে দিল্লি হাইকোর্ট রেলের কাছে জানতে চেয়েছে, কেন আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি করা হয়েছিল। হাইকোর্ট বলেছে, রেলের নিজস্ব আইন রয়েছে। সেই আইন মেনে চলা হলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। রেলের কাছে হলফনামা চেয়েছে আদালত।
আরও পড়ুন: ‘পদপিষ্টের ঘটনা হাফমন্ত্রীর অবহেলার ফল’, দিল্লির ঘটনায় অশ্বিনীকে দুষলেন অভিষেক
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নয়া দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে১৮ জন নিহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে দিল্লি হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিল একটি এনজিও। মামলাটি ওঠে প্রধান বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায় এবং বিচারপতি তুষার রাও গেদেলারের ডিভিশন বেঞ্চে। মামলার শুনানির সময় বেঞ্চ রেলকে প্রতি কামরায় যাত্রী সংখ্যা নির্ধারণের বাধ্যতামূলক আইন উপেক্ষা করার জন্য প্রশ্ন তোলে।
রেলওয়ে আইন ১৯৮৯ এর ৫৭ ধারা তুলে ধরে বেঞ্চ জানায়, এই আইনে প্রতি কোচে সর্বোচ্চ অনুমোদিত যাত্রী সংখ্যা নির্ধারণের নির্দেশ রয়েছে। যদি একটি কোচে যাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে তাহলে কেন সেই সংখ্যার চেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি করা হল? তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতার উদ্দেশ্যে বেঞ্চ বলে, ‘এটাই সমস্যা।’ আদালত বলেছে, এই নিয়ম সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে এই ধরনের ট্র্যাজেডি রোধ করা যেতে পারত। আদালত বলেছে, ‘আপনারা যদি একটি সহজ জিনিস ইতিবাচক এবং যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেন, তাহলে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যেতে পারত।’
রেলওয়ে আইনের ১৪৭ ধারার বাস্তবায়ন নিয়েও আদালত প্রশ্ন তুলেছে। এই আইনে বিনা টিকিট স্টেশন চত্বরে প্রবেশে শাস্তির বিধান রয়েছে। আদালত বলেছে, যে এই আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করলে ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং বিশৃঙ্খলা রোধ করা যেত। বেঞ্চ মনে করিয়ে দিয়েছে, ‘প্ল্যাটফর্ম টিকিট বা ট্রেনের টিকিট ছাড়া প্ল্যাটফর্মে ঘোরাফেরা করলে তার বিরুদ্ধে ১৪৭ ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তবে এমন নয় যে রেল পদক্ষেপ নেয় না। তবে এই পদক্ষেপ সম্ভবত অপর্যাপ্ত।’ এনজিওর আইনজীবী আদিত্য ত্রিবেদী যুক্তি দেন যে রেলের গাফিলতি ছিল। তারা পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করেই বেশি টিকিট বিক্রি করেছিল। যার ফলে অতিরিক্ত ভিড় এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণের অভাব দেখা দেয়।
তিনি জানান, বিমানবন্দরগুলিতে মানুষের সংখ্যা ট্র্যাক করার ব্যবস্থা আছে। তবে রেল এমন কোনও ব্যবস্থা নেই। যদি রেল নিজস্ব নিয়ম মেনে না চলে, তাহলে মানুষ কীভাবে নিরাপত্তা বোধ করবেন।এর উত্তরে মেহতা বলেন, যে প্রশাসন আইন মেনে চলছে এবং যাত্রী সুরক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তিনি স্বীকার করেছেন যে অসংরক্ষিত কামরাগুলিতে প্রায়ই মানুষের ভিড় দেখা যায়। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তিনি আদালতকে আশ্বস্ত করেন, যে রেলওয়ে বোর্ড এই উদ্বেগগুলি খতিয়ে দেখবে। এরপর আদালত রেলওয়ে বোর্ডকে সর্বোচ্চ স্তরে ৫৭ এবং ১৪৭ ধারার বাস্তবায়ন মূল্যায়ন করতে নির্দেশ দেয়। মামলার পরবর্তী শুনানির ২৬ মার্চ। তার মধ্যে এনিয়ে সিদ্ধান্তের বিস্তারিত বিবরণ সহ একটি হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।