যাঁর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে চর্চা চলছিল, আজ (সোমবার -৩ মার্চ, ২০২৫) জানা গেল, আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা সেই তরুণী, শাহজাদি খানকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির আইন অনুসারে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারিই আবুধাবিতে ফাঁসি দিয়ে দেওয়া হয়েছে! এদিন ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দিল্লি হাইকোর্টকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এদিন বিচারপতি সচিন দত্তের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। সেই শুনানিতে বিদেশ মন্ত্রকের হয়ে প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল (এএসজি) চেতন শর্মা। তিনি জানান, আগামী ৫ মার্চ আবু ধাবিতেই শাহজাদির শেষকৃত্য হবে। আদালতকে এএসজি জানান, মন্ত্রকের পক্ষ থেকে শাহজাদির পরিবারকে সবরকমভাবে সহযোগিতা করা হবে এবং শেষযাত্রার বিষয়েও সমস্ত সাহায্য করা হবে।
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এই তথ্য পেয়ে আদালত এই ঘটনাটিকে 'দুর্ভাগ্যজনক' বলে উল্লেখ করেছে। শাহজাদির বাবা শাব্বির খান জানতে চেয়েছিলেন, আবু ধাবিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩৩ বছর বয়সী শাহজাদি আসলে কেমন আছেন? কারণ, তিনি মেয়ের সম্পর্কে কোনও তথ্যই পাচ্ছিলেন না। আর, আজ জানা গেল, সেই মেয়েই নাকি আর নেই!
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা শাহজাদি খান আবু ধাবিতে বাচ্চার দেখাশোনার কাজ করতেন। তিনি সেই কাজে থাকাকালীন ৪ মাসের একটি শিশুর মৃত্যু হয়। যার জন্য শাহজাদিকেই দায়ি করা হয়। ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শাহজাদিকে গ্রেফতার করে আবুধাবির পুলিশ। এবং সেই বছরেরই ৩১ জুলাই তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে স্থানীয় একটি আদালত।
পিটিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বৈধ ভিসা নিয়ে আবুধাবিতে গিয়েছিলেন শাহজাদি। ২০২২ সালে তিনি আয়ার চাকরি পান। তাঁর কাজ ছিল, সংশ্লিষ্ট এক দম্পতির সদ্যোজাত ছেলের দেখাশোনা করা। কিন্তু, ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর সেই শিশুটিকে নিয়মমাফিক টিকা দেওয়ার পর সেদিন সন্ধ্যাতেই তার মৃত্যু হয়।
শাহজাদির বাবার অভিযোগ ছিল, ওই শিশুর বাবা-মা শিশুর দেহের ময়নাতদন্ত হতে দেননি এবং ঘটনার তদন্তও করতে দেননি। শুধু তাই নয়, তাঁরা শাহজাদির উপর নির্যাতন করে তাঁকে এই মৃত্যুর দায় স্বীকার করতে বাধ্য করেন এবং শাহজাদির সেই তথাকথিত স্বীকারোক্তির ভিডিয়োটি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশ্যে আসে।
শাহজাদির বাবা আরও যে অভিযোগ করেছেন সেটা আরও ভয়ঙ্কর। তাঁর দাবি, আবুধাবিতে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের আইনি প্রতিনিধি পর্যন্ত তাঁকে এই মৃত্যুর দায় স্বীকার করার জন্য চাপ দেন! এমনকী, শাহজাদিকে যথাযথ আইনি সহায়তা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শাহজাদির আবেদন বাতিল করা হয় এবং ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যুদণ্ড পুনরায় নিশ্চিত করা হয়। ২০২৪ সালের ১১ জুলাই আবু ধাবির ভারতীয় দূতাবাসের কাছে মেয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন জানান শাব্বির খান। কিন্তু, তার কোনও জবাব তিনি পাননি। ২০২৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষবার আবুধাবির জেল থেকে বাড়িতে ফোন করেছিলেন শাহজাদি। তিনি জানিয়েছিলেন, শীঘ্রই তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে!